Garia, Kolkata, WB, India
+91-9898989898

… সুন্দর ভুবনে

… সুন্দর ভুবনে

মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে …জগতে অনন্তকাল ধরে জীবন উপভোগের আকাঙ্খা মানুষের চিরন্তন। আর বর্তমান পরিস্থিতি যেখানে মানুষকে গৃহবন্দি করে সার্বিক বিষন্নতায় বন্দী করে রেখেছে সেখানে বিশ্ববিধাতার কাছে সব সময় যেন প্রাণ ভিক্ষাই একমাত্র প্রার্থনা। প্রকৃতি ও মানুষের সান্নিধ্যময় মানবজীবন থেকে বিদায় নিতে আমরা কেউ প্রস্তুত নই। আর তাই বিগত পনেরো মাস যাবৎ আমরা শুরু করেছি এক নতুন জীবন যুদ্ধের। এক অদৃশ্য অণুজীবের সাথে প্রতি নিয়ত লড়াই করতে করতে আজ আমরা কিছুটা ক্লান্ত।কিন্তু যখনই চোখের সামনে দেখেছি কর্মহীন দিনমজুরের চোখের জল, যখন দেখেছি রাস্তার ভবঘুরের অন্নহীন দিনযাপন, যখন শুনেছি ইটভাটার ক্ষুধার্ত শিশুর একটু খাবারের জন্য কান্না; আমরা তখন স্থির থাকতে পারিনি।তারই সাথে আম্ফান ঝড়ের নির্মম দাপট ও তার করুন পরিণতি আমাদের আরো উদ্বিগ্ন করে তোলে। সেই দিন থেকে সোপান সংকল্প নেয় এই নিরন্ন অসহায় মানুগুলোর পাশে দাঁড়ানোর।

আমরা শুরু করি সুদূর সুন্দরবন, টাকি-বসিরহাট-চৈতল- সংগ্রামপুর, নদীয়ার রানাঘাট, হাওড়া, হুগলি, কলকাতা, দক্ষিণ 24 পরগনা, বর্ধমান, মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার জেলার বিভিন্ন জায়গায় অসহায় মানুষের হাতে রেশন তুলে দিতে, কখনো অনাথ আশ্রমে, ইটভাটার শিশু, পথশিশু বা ভবঘুরেদের পুষ্টিকর খাবার পৌঁছে দিতে, কখনো আবার আম্ফান কবলিত এলাকায় শুকনো খাবার সহ ত্রিপল ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছে দিতে।

আমরা আশা করেছিলাম হয়তোবা এই করুণ পরিস্থিতির পরিসমাপ্তি ঘটবে খুব তাড়াতাড়িই। কিন্তু না, বর্তমানে আরো একটু জটিল পরিস্থিতির সম্মুখীন হলাম আমরা। কখনো হারাতে হচ্ছে নিজের কোন প্রিয়জনকে, কখনো বা চোখের সামনে ছোট ছোট ভাই বোনকে অভিভাবকহীন হতে দেখছি। কিন্তু না, থেমে থাকা নয়, অনেক বেশি সহনশীলতা আর ধৈর্য নিয়ে অনেক বেশি বাস্তববাদী হয়ে পাশে দাঁড়াতে হবে এই সব পরিবারের।হয়ত এই কষ্টবোধ ই আমাদের আত্মশক্তিতে বলীয়ান করে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর শক্তিতে উজ্জীবিত করবে। আর এই কঠিন লড়াইতে সকলের সাহায্যের হাতগুলি আমাদের একান্তই প্রয়োজন। 

বর্তমানে রাজ্যজুড়ে আবারও লক ডাউনের জেরে ক্ষুধার্ত, নিরন্ন সহনাগরিকদের জন্য আমরা বিভিন্ন জায়গায় কমিউনিটি কিচেনের ব্যবস্থা করেছি। বিভিন্ন জায়গায় আমাদের সদস্যরা ব্যবস্থা করেছে কিছু অক্সিজেন সিলিন্ডার আর অক্সিজেন কনসেনট্রেটরের। যদিও প্রয়োজনের তুলনায় সেটা নিতান্তই কম। এখনও বেশ কিছু অক্সিজেন সিলিন্ডার এবং অক্সিজেন কনসেনট্রেটরের ব্যবস্থা আমাদের অতি দ্রুতই করতে হবে। তারই সাথে এই মুহূর্তে হাসপাতালে পৌঁছে দেবার জন্য একটি অ্যাম্বুলেন্স ও অন্তত একটি টোটো গাড়ির বিশেষ প্রয়োজন।

আমরা জানি ঐক্যবদ্ধ মানুষের কাছে অস্ত্রের ক্ষমতাও তুচ্ছ হয়ে যায়।ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসে সফলতার সম্ভাবনাই বেশি। সকলের এই সম্মিলিত প্রয়াস নিশ্চয় আবার সুস্থ সুন্দর সমাজ গড়ে তুলবে।জীবনের অবধারিত সত্যের কোন ব্যত্যয় ঘটে না জানি তবু এই অতিমারিকে নিশ্চয় সকলে মিলে প্রতিহত করতে পারবো। আসুন আজ সকলে মিলে হতাশা, হীনমন্যতা বা অলসতা নয়, ব্যক্তি স্বার্থের ক্ষুদ্র পরিসরে নয়, মানব স্বার্থের চিন্তায় নিজেকে নিয়োজিত করি। উপচিকীর্ষা, বিবেক, মানবিকতা, সহমর্মিতা, সহানুভূতি আর ভালোবাসাই হোক আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছনোর সোপান

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *