Garia, Kolkata, WB, India
+91-9898989898

সোপানের শিক্ষাঙ্গন

সোপানের শিক্ষাঙ্গন

গত দু’বছরের অতিমারী সংকটে আমরা দেখেছি অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের জনদরদি কাজ। চরম দুর্দশাগ্রস্ত প্রান্তিক মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে নিরলসভাবে তাদের জন্য কাজ করে গিয়েছে এইসব সংস্থাগুলো। তাদের মধ্যে অন্যতম এক নাম সোপান। বিগত দু’বছর ধরে সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় এদের কর্মকান্ড সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। অসংখ্য দুর্গম জায়গায় দুর্গতদের বিভিন্ন রকম সহযোগিতা, কোথাও খাবার-দাবার দিয়ে, কোথাও জামাকাপড়, কোথাও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা, কোভিডের সময় কখনওবা প্রাণদায়ী অক্সিজেন ও ওষুধ সরবরাহ – এরকম অসংখ্য মানবদরদি কর্মযজ্ঞ। কিন্তু সোপানের প্রাথমিক স্বপ্ন ছিল, দরিদ্র প্রান্তিক শিশুদের কাছে প্রকৃত শিক্ষার আলো পৌঁছে দেওয়া।

সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত করতেই সুন্দরবন সংলগ্ন চৈতল-এ এক শিক্ষাঙ্গন চালু করেছে সোপান। সেখানে নিয়মিতভাবে সত্তর জন বাচ্চাকে শিক্ষাদান করে চলেছে সোপান। চৈতলে তিনজন শিক্ষককে পাকাপাকিভাবে নিযুক্ত করা হয়েছে। সামান্য হলেও নিয়মিতভাবে তাদের মাসিক বেতনও দেওয়া হচ্ছে।

উত্তর ২৪ পরগনার সংগ্রামপুরের শায়েস্তানগরে চলছে অন্য একটি শিক্ষাঙ্গন। এখানকার কলাপোতা ইয়ুথ সোশ্যাল ওয়ার্ক অ্যাকাডেমি চালাচ্ছে এই শিক্ষাঙ্গন। কলাপোতা ইয়ুথ সোশ্যাল ওয়ার্ক অ্যাকাডেমির যে স্কুলঘরে পাঠদান চলছিল, আম্ফান ঝড়ে সম্পূর্ণ ধূলিসাৎ হয়ে যাওয়ায় সেটাকে পুণরায় গড়ে তুলতে এবং সেখানে ছাত্র ছাত্রীদের প্রয়োজনীয় কম্পিউটার দিয়ে সমস্ত রকম সহযোগিতা করে চলেছে সোপান। সেখানে বাচ্চাদের কম্পিউটার শেখানো এবং পড়ানো একই সাথে চলছে। ওখানকার বাচ্চাদের নিয়মিত পড়ানো, কমপিউটার শেখানো ও শিক্ষকদের সাম্মানিকের ব্যবস্থা করে কলাপোতা ইয়ুথ সোশ্যাল ওয়ার্ক অ্যাকাডেমি। তাদের বিভিন্ন ইনফ্রাস্ট্রাকচারাল সহযোগিতা করা ছাড়াও বাচ্চাদের বিভিন্ন সামাজিক দায়িত্ববোধ গড়ে তোলা ও নানারকম এক্সট্রাকারিকুলার এক্টিভিটিসের দায়িত্ব নিয়েছে সোপান। দীর্ঘদিন ধরে এই কাজগুলো নিয়মিতভাবে করে চলেছে কলাপোতা ইয়ুথ সোশ্যাল ওয়ার্ক অ্যাকাডেমি এবং এই কাজটি কে আরো ভালোভাবে ও বড় করে এগিয়ে নিয়ে যেতে পাশে আছে সোপান।

এছাড়াও নদীয়ার কল্যাণীর পাশে মদনপুরে এমনই একটা স্কুলঘর, সেখানে প্রথম জেনারেশন লার্নার প্রায় পঞ্চাশ জন বাচ্চা নিয়মিত পড়াশুনা করছে, সেটি পুনর্নিমাণ করতে সহযোগিতা করেছে সোপান। সেখানে স্কুলঘর ও তার আশেপাশের কিছু জমিতে হচ্ছে সব্জি চাষ, পুকুরে হচ্ছে মাছ চাষ, তৈরি হচ্ছে ভার্মি কম্পোস্ট। শিক্ষকদের সাথে হাত লাগিয়ে স্কুলের বাচ্চারাই করছে এসব কাজ এবং সেগুলোই বাজারে বিক্রি করে কিছুটা স্বনির্ভরতা শেখানো হচ্ছে বাচ্চাদের। ভার্মি কম্পোস্ট এবং অন্যান্য জিনিস বিক্রি করে যে আয় হচ্ছে; সেটা দিয়েই চেষ্টা চলছে স্বনির্ভর হয়ে উঠার। ওখানে পড়াশুনা ছাড়াও অন্যান্য কিছু সাপোর্ট দেওয়ার চেষ্টা করে চলেছে সোপান।
আর এক শিক্ষাঙ্গন রয়েছে রানাঘাটে। রানাঘাটের বিখ্যাত সংগঠন – “মানবিক রানাঘাট” এর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে চলছে সেই শিক্ষাঙ্গন। এখানে শিক্ষাদানের ব্যাপারটা প্রায় পুরোটাই দেখছে মানবিক রানাঘাট। আদিবাসী পাড়ায় মানবিক রানাঘাটের অফলাইন ক্লাসের পাশাপাশি সোপান সেখানেও অনলাইন ক্লাসের জন্য প্রজেক্টর কিনে দেওয়া, আর মোটিভেশনের ক্লাসের পাশাপাশি বিভিন্ন রকম এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিস – যেমন ক্যারাটে শেখানো, অ্যাডভেঞ্চার সংক্রান্ত ক্লাস – এই কাজগুলো করছে। ইচ্ছা আছে অদূর ভবিষ্যতে মানবিক রানাঘাটের পরিচালনায় চূর্ণী নদীর তীরে দীর্ঘ দিন চলা বি. বি. এস. ও সরকার ভাটায় ‘মানবিক পাঠশালাতে‘ ও একই ধরণের অনলাইন পরিকাঠামো গড়ে তোলার।

সুন্দরবনের আরেকটি গ্রাম শামশেরনগরে এরকমই এক শিক্ষাঙ্গনে সহযোগিতা করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। সেখানকার নেতাজি-স্বামিজি মিশনের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথাবার্তা চলছে। কিন্তু যেহেতু অত প্রত্যন্ত জায়গায় মোবাইল নেটওয়ার্ক খুবই দুর্বল তাই এখন অবধি সেই প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়ে ওঠেনি। ওখানেও চৈতল, সায়েস্তানগর, মদনপুর, রানাঘাটের মতন প্রজেক্টর কম্পিউটার দিয়ে অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা করা হবে, যদি নেটওয়ার্ক ঠিক করা সম্ভব হয়।

এই শিক্ষাঙ্গন গুলোর ছাত্র-ছাত্রীরা সবই প্রায় প্রথম প্রজন্মের শিক্ষার্থী। গত দু’বছর লকডাউন এ সমস্ত স্কুল-কলেজ বন্ধ। শহরের সচ্ছল পরিবারের ছেলেমেয়েরা অনলাইন ক্লাস করে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারছে। কিন্তু গ্রামের এইসব হতদরিদ্র ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে অনলাইন ক্লাস এক অলীক স্বপ্ন। স্বভাবতই সেই বাচ্চাদের পড়াশোনা গতবছর থেকে পুরোপুরি থমকে আছে। সেই ভাবনা থেকেই সোপানের সদস্যদের এই উদ্যোগ। অনলাইন শিক্ষার মাধ্যমে এই প্রান্তিক অঞ্চলগুলোর দুঃস্থ ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে সাধ্যমত শিক্ষার আলো পৌঁছে দেওয়ার আন্তরিক প্রচেষ্টা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *